বিশেষ প্রতিনিধি ॥ কুষ্টিয়ায় টুটুল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় চরমপন্থীদের সম্পৃক্ততার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে সদর উপজেলার মধুপুর পশুহাট সংলগ্ন কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কের পাশে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় টুটুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি শটগান, মটরসাইকেল ও কয়েক রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়। নিহত টুটুল হোসেন (৪০) ওই গ্রামের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা তুরাব হোসেনের ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে দেশে ফিরে স্থানীয় বাজারে একটি দোকান চালাতেন। কুষ্টিয়া পুলিশের বিশেষ শাখার একটি সূত্র জানায়, টুটুল হোসেনের সাবেক জামাই ইমরান হোসেন চরমপন্থীদের সহযোগিতায় হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে তাদের কাছে তথ্য রয়েছে। সূত্র বলছে, ইমরান হোসেনের সাথে বিয়ে হয়েছিল টুটুল হোসেনের মেয়ে টুম্পার। তবে সে সংসার বেশিদিন টেকেনি। ইমরান হোসেন তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চালাত এমন অভিযোগে টুটুল হোসেন তার মেয়েকে দিয়ে ইমরান হোসেনকে তালাক দেওয়ান। এরপর থেকে ইমরান নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছিলেন বলে সূত্র জানায়। স্ত্রীর সাথে সংসার করতে না পারার ক্ষোভ থেকে ইমরান স্থানীয় চরমপন্থী সংগঠনের সদস্যদের যোগসাজসে সাবেক শ্বশুর টুটুল হোসেনকে গুলি করে হত্যা করেছে বলে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে অপর একটি সূত্র বলছে, স্থানীয় মধুপুর কলার হাটের ইজারা সংক্রান্ত বিরোধের কারণেও টুটুল হোসেনকে খুন করা হতে পারে। জানা গেছে, সম্প্রতি দরপত্রে অংশ নিয়ে ওই হাটের ইজারা পান সদর উপজেলার পিয়ারপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী শরিফুল ইসলাম। তবে পরে ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলার বাগআঁচড়া গ্রামের চরমপন্থী কালেক্টেড ইউনুস আলী চাপ প্রয়োগ করে শরিফুলের কাছ থেকে হাটের ইজারার স্বত্ব নিজের নামে লিখে নেন। এছাড়া হাট ইজারার দরপত্র কেনার অপরাধে শরিফুলের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন ইউনুস। দলিল করে হাট হস্তান্তর করলেও ১০ লাখ টাকা দিতে গড়িমসি করছিলেন শরিফুলসহ তার অন্য পার্টনাররা। এ কারণে শরিফুলকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন ইউনুস ও তার লোকজন। এদিকে চাঁদার ১০ লাখ টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে চরমপন্থী কানেক্টেড ইউনুস হোসেন। অন্যদিকে সাবেক শ্বশুরের ওপর প্রতিশোধ নিতে চরমপন্থীদের সাথে যোগ দেন ইমরান হোসেন। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার রাতে শরিফুল স্থানীয় বিএনপি নেতা ইউনুস হোসেনের অফিসে বসেছিলেন। এই ইউনুস হোসেনের সাথে গভীর সখ্যতা ছিল নিহত টুটুল হোসেনের। টুটুল বিএনপি নেতা ইউনূসের অনেকটা বডিগার্ড হিসেবে কাজ করতেন। ঘটনার সময় টুটুলও ওই অফিসে ছিলেন।
সে সময় সেখানে হানা দেন চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে গুলিতে নিহত হন টুটুল হোসেন। এছাড়া বিএনপি নেতা ইউনুস সামান্য আহত হন বলে সূত্র বলছে। এ দুটি সূত্র ধরেই তদন্ত চলছে বলে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার সূত্রটি জানায়। পরে চরমপন্থীরা মটর সাইকেল ফেলে অন্য গাড়ীতে পালিয়ে যায়। সূত্র জানিয়েছে, মুলত হাট নিয়ে বিরোধের জেরে অস্ত্রধারীরা শরিফুলকে না পেয়ে শরিফুলের পার্টনার ইউনুসের মধুপুরের অফিসে হামলা চালায়। কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদী হাসান বলেন, টুটুল হত্যাকান্ডের ঘটনায় কেউ এখনো থানায় মামলা করতে আসেনি। মামলা হলে জানা যাবে নিহতের পরিবার হত্যাকান্ডের জন্য কাউকে সন্দেহ করছেন কিনা। তবে কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে এরই মধ্যে তারা হত্যাকান্ডের তদন্তে নেমেছেন বলে জানান ওসি। তবে এ ঘটনায় এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।