ঢাকা অফিস ॥ পদ্মা সেতু টাকার অঙ্কে বিবেচনার জিনিস নয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই একটা প্রকল্প দেশের ভাবমূর্তি ঘুরিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্ববাসী এখন সমীহ করে চলে। শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে যারা কথায় কথায় খবরদারি করত, পদ্মা সেতু নির্মাণের পর তাদের মানসিকতা বদলে গেছে। এখন এই সেতু গর্বের সেতু, এটা টাকার অঙ্কে বিবেচনার জিনিস নয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশবাসী পাশে ছিল বলেই জ্ঞানীগুণীদের বাধা সত্ত্বেও সব অতিক্রম করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পেরেছি। সবাই না করেছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই জটিল স্থাপনা আমরা নির্মাণ করতে পেরেছি।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে এখন আমরা বুক ফুলিয়ে গর্বের সঙ্গে চলছি। আগামী দিনে যত বাধাই আসুক, অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেতু নির্মাণে জড়িত সব শ্রমিক-কর্মকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই আমি আজ এখানে এসেছি।’ দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সাধারণত কোনো প্রকল্প শেষ হলে কোনো অনুষ্ঠান হয় না। কিন্তু পদ্মা সেতুর বিষয়টি একেবারেই আলাদা। যারা এই কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে ছিলেন, তাদের কৃতজ্ঞতা জানাতেই এই অনুষ্ঠান। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে কথিত দুর্নীতির প্রমাণ চেয়েছিলাম আমি। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে বলেছিলেন তারা, আমি করিনি। পদ্মা সেতু নিজেদের টাকায় করেছি। তিনি আরও বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিইনি বলে ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসতে পারিনি। বড় বড় দেশের নারাজিতে যা হয়, তাই হয়েছিল আমারও। কেননা দেশের সম্পদ বেচতে রাজি হইনি। আমি জাতির পিতার কন্যা, দেশের সম্পদ বিক্রি করে ক্ষমতায় বসতে পারি না।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা ব্যাংকের এমডির পদের জন্য একজন নোবেলজয়ী এত লালায়িত কেন, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও পেলাম না। হুমকি দেয়া হয়েছিল, এমডি পদ না থাকলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ হয়ে যাবে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘ড. ইউনূসকে নিয়ে কোনো মার্কিনির কথা শুনব না। দেখাও করব না। বলে দিয়েছিলাম তাদের। এমডি পদে থাকতে পারল না বলে হিলারি ক্লিনটনের মাধ্যমে সেতুর টাকা বন্ধ করল। মালয়েশিয়া সরকার পদ্মা সেতুতে টাকা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজেদের টাকায় করেছি এটা।’ শেখ হাসিনা বলেন, যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করলো, সে জাতি কেন মাথা নিচু করে চলবে? অকুতোভয় জাতিকে একেবারেই মর্যাদাহীন করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক ঝড়ঝাপটা পার করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সেতু বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মনজুর হোসেন। প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন পদ্মা বহুমুখী সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পদ্মা সেতু থিম সং প্রচার করা হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর উপর একটি প্রামাণ্য চিত্র দেখানো হয়। সুধী সমাবেশে সেতুমন্ত্রী ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়।